পাঠক্রমের মূল্যায়ন
পাঠক্রম রচনার করলেই শুধু কাজ শেষ হয়ে যায় না। দেখতে হবে যে পাঠক্রম উপযোগী হলো কিনা, সেই পাঠক্রম শিক্ষার্থীর পরিবেশ যোগ্য হল কিনা বা শিক্ষনীয় বিষয়বস্তু কিছু আছে কিনা এবং শিক্ষার্থীর কাছে তা কতখানি গ্রহণযোগ্য তাও দেখতে হবে। আর এ জন্যই প্রয়োজন পাঠক্রমের যথার্থ মূল্যায়ন।
পাঠক্রম রচনার পরেই বহু শিক্ষাবিদ পাঠক্রম এর মূল্যায়ন এর ওপর দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছেন এবং পাঠক্রম এর মূল্যায়ন এর ওপর কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেছেন যার ফলে পাঠক্রমের স্রষ্টারা একটি পাঠক্রমের রূপ দেয়ার পরবর্তী মূল কার্য হিসেবে পাঠক্রমের মূল্যায়ন এর দিকে তাদের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। স্যার স্যান্ডার্সের বক্তব্যে কিছুটা রূপ নিরূপিত হয় যে আংশিকভাবে বা সামাজিকভাবে পাঠক্রমের গুন বা যোগ্যতার পরিপূর্ণ বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া তার নামই হল পাঠক্রম এর মূল্যায়ন।
অন্যদিকে স্যার কপার আরও বৃহত্তর ও ব্যাপক অর্থে পাঠক্রম এর মূল্যায়ন এর সংজ্ঞা দিয়েছেন তিনি বলেন যে পাঠক্রম মূল্যায়নের প্রক্রিয়ার প্রথমার্ধে কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয় এবং সেই প্রমাণের উপর ভিত্তি করে পাঠক্রম এর কার্যকারিতা উপযোগিতা ও শিক্ষাগত মূল্য অর্থ সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্ত গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
অর্থাৎ অন্যভাবে বলা যায় যে পাঠক্রমের যে কার্যাবলী রয়েছে তার মূল্যায়ন এবং তার কার্যকারিতা ও উদ্দেশ্য পূরণের যথার্থতা বিশ্লেষণ এর নামই হল পাঠক্রমের মূল্যায়ন।
পাঠক্রমের গুণগত ফলাফল পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন পাঠ্যপুস্তক এর বিষয়বস্তু নির্বাচন এবং বাস্তব ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শিক্ষার উপযোগী যে সাধন বস্তু সেগুলির যথার্থতা এই পাঠক্রম এর মূল্যায়ন এর মধ্যেই অন্তর্গত।
আবার অন্যদিকে পাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী মূল্যায়ন হলেই যে পাঠক্রম মূল্যায়িত হলো সে কথা বলা উচিত নয় তার কারণ পাঠ্যক্রম বৃহত্তর ক্ষেত্রে কিভাবে কাজ করে তা দেখা প্রয়োজন এবং বিদ্যালয় পরিবেশে পাঠ্যক্রম এর উপযোগিতা কার্যকারিতা ও যথার্থতা কতখানি পূরণ হলো তার উপরেও নজর দেয়া প্রয়োজন তাই পাঠক্রম এর মূল্যায়ন সাধারণত কয়েকটি বিষয়ের উপর নজর দিয়ে তৈরি করা যায় যেমন,
ক ) শিক্ষার্থীর চাহিদা এবং তাদের উন্নতির হার:
আমরা জানি শিক্ষার্থীর কতগুলি মৌলিক চাহিদা রয়েছে এবং সেই মৌলিক চাহিদা গুলি তাদের সমাজ ও সংস্কৃতি এবং তাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু পরিবার গত দিক থেকে কতখানি পূরণ করা সম্ভব সেই দিকটা নজর দিতে হবে। শিক্ষার্থীর যে নৈতিক চাহিদা সেগুলিকে মিটিয়ে তাদের পাঠ্যক্রম এর প্রতি আগ্রহী ও মনোভাব আসন্ন করে তুলতে এবং যাতে তাদের উন্নতি সাধন ঘটানো যায় সেই রকম শিক্ষাশ্রয়ী পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের উন্নতির হার নির্দেশ করতে হবে। এবং দেখতে হবে যাতে শিক্ষার্থী পার্থক্য মেয়ের সাথে সমন্বয় সাধন করে নিজেকে এবং তার শিক্ষার পরিসর যাতে উন্নয়ন সাধন করতে পারে।
খ) শিক্ষকের কাছে এই পাঠক্রম কতখানি ফলপ্রদ তা দেখা:
শুধু শিক্ষার্থীর উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীর চাহিদাই নয় তার সাথে সাথে শিক্ষার্থীর শিক্ষকের কাছে এই পাঠক্রম কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং পাঠক্রমের কার্যাবলী কতখানি ফলপ্রসূ তাই দেখতে হবে কারণ পাঠক্রম রচনার সময় শুধু শিক্ষার্থীর নাম শিক্ষার্থীর পর্যন্ত যিনি এই পাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনা করে নিয়ে যাবেন এবং শিক্ষার্থীর উন্নয়ন সাধন করবেন সেই শিক্ষকের পাঠক্রম সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা ও সম্পন্ন জ্ঞান থাকা প্রয়োজন এবং তিনি যেন জানেন যে কিভাবে এই পাঠক্রম সংরক্ষণ এবং সঞ্চালন করতে হবে উপযুক্ত উন্নয়নের হার তার সঞ্চালন করতে হবে উপযুক্ত উন্নয়নের হার পাওয়ার জন্য।
গ) শিক্ষা গ্রহণের সময় পরিবর্তনের উপর নজরদান :
আলোচিত হয় শিক্ষার্থীর জন্য এবং সেই শিক্ষার্থীর উন্নয়ন সাধনের জন্য কিন্তু মনে রাখতে হবে পাঠক্রমের যে কার্যাবলী এবং প্রকৌশল সেটি সাধন হয় যখন শিক্ষক সেটিকে ঠিকভাবে শিক্ষার্থী পর্যন্ত পৌঁছে দেন এবং যাতে শিক্ষা গ্রহণের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সাথে সঠিক এবং উপযুক্ত ব্যবহার এবং আচরণের মাধ্যমে পাঠক্রমের নিরূপণ করতে পারে। এই বিষয়টিতে নজর দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণের সময় পাঠক্রমের নির্দেশিকা এবং পাঠক্রমের উপযোগিতা মূলক স্তর গুলির ঠিকঠাক শ্রেণীবিন্যাস এবং শিক্ষা গ্রহণে সমর্থ হয় সেই জন্য শিক্ষার্থীর আচরণ এবং শিক্ষা গ্রহণের সময় শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত এবং সামাজিক আচরণের ওপর নির্দেশ দান করা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন শিক্ষকের জন্য।
ঘ) শিখন পরিবেশ কেমন দেখা:
পাঠক্রমের উপযুক্ত মূল্যায়ন তখনই সম্ভব যখন শিখন পরিবেশ একদম উপযুক্ত হয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য তাই শিখন পরিবেশটি কেমন সেটি নির্বাচন এবং বিশ্লেষণ করে দেখা প্রয়োজন রয়েছে।
ঙ) পাঠক্রমের উৎসের ব্যবহার:
লিউই পাঠক্রম মূল্যায়নের সঠিক দিক চিহ্নিত করেছেন-
১. পাঠক্রম গড়ে তোলার সময় কাল
২. মূল্যায়নের বিষয়বস্তু নির্বাচন
৩. মূল্যায়নের মান নির্দেশন
৪. স্বীকৃত বিষয় ও তথ্যের ধরন
৫. শিক্ষিত বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ এর পদ্ধতি
৬. শিক্ষার সার্বিক ক্ষেত্র গুলিতে পাঠক্রমের ভূমিকা নির্বাচন।
0 Comments