adsterra

WBCS গুরুত্বপূর্ণ স্টাডি মেটিরিয়াল - প্রথম অধ্যায় প্রাচীন ভারতের ইতিহাস

 

  •  ভারতের ইতিহাসকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয় প্রথমটি হল প্রাচীন দ্বিতীয় টি মধ্যযুগীয় এবং তৃতীয়টি আধুনিক ভারতের ইতিহাস। 

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস এর প্রধান পাঠ্য বিষয়গুলি নিম্নে বর্ণিত হল। প্রাচীন যুগের ইতিহাসটি প্রথম পর্যায়ে হলো প্রস্তর যুগ থেকে। প্রস্তর যুগ বা প্যালীয়তিক এজ। প্যালীয়তিক শব্দটির উদ্ভাবন করেছিলেন প্রথমতত্ত্ববিক জন লুববুক ১৮৬৫ সালে। এবং তিনি বলেন প্রাগৈতিহাসিক কোয়ার্ডজ থেকে পাথরের বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করা হয়েছিল যেগুলির মধ্যে প্রধান হল হাতকোঠার বল্লম এবং তীক্ষ্ণ ধারালো অস্ত্র।

 মেসোলিথিক এজ :

 এটি হলো পাথরের যুগের দ্বিতীয় পর্যায়ে কারণ প্রধানত ছোট তীক্ষ্ণ ধারালো পাথরের সামগ্রী যেগুলো ভীমবেটকা আদম গড় প্রতাবগড় এবং মির্জাপুর এ পাওয়া গিয়েছে মেসোলিথিক আর্ট এবং পেন্টিং  এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

 নিয়োলিথিক বা নব্য প্রস্তর যুগ :

 এই সময়কালে সুন্দরভাবে পালিশ করা পাথর এবং কৃষি কাজের সূচনার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় ভাবে জানা দরকার যে এই সময়েই মানুষ চাকা তৈরি ও আগুনের ব্যবহার শিখেছিল।

 নম্বর প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপ -

১. কৃষি কাজের সূচনা

২. গবাদি পশুর পালন

৩. পালিশ করা মসৃণ পাথর  এর ব্যবহার

৪. প্রয়োজনীয় পাথরের বাসনপত্রাদি তৈরি

 তাম্র প্রস্তর যুগ :

 উপরের তিনটি যুগ পর্যায় মানুষ শিখে গিয়েছিল কিভাবে কলা আকৃতি তৈরি করতে হয় এবং এই পর্যায়ে ক্রমে তারা ধাতুর সামগ্রী তৈরি করে। কিন্তু পাথরের ব্যবহার তারা একেবারে ছেড়ে দেয়নি বিশেষ করে অলংকার আদিতে তখনও পাথরের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে তামার ব্যবহার শিখে গিয়েছিল। তামা ছিল তাদের প্রথম প্রাপ্ত এবং ব্যবহৃত ধাতু এবং এই ধাতু ও পাথরের যৌথ কারিগরিকেই তাম্র প্রস্তর যুগ বলা হয়।

      তথাপি কোন ঐতিহাসবিধির নির্দিষ্ট করে কোন কিছুর প্রমাণ দিতে পারেনি তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই মতবিরোধ বিদ্যমান। তবে তার মধ্যে  বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে প্রস্তর যুগের প্রত্যেকটি পর্যায়ের সঠিক সময়কাল। ইতিহাসবিদরা প্রধানত দুটি উৎস থেকে অনুমান করে থাকেন যা হলো নিম্নরূপ -

১. প্রাচীন সাহিত্য অধ্যায়ন বা লিটারেসি

২. প্রত্নতাত্ত্বিক সরঞ্জাম ও নিদর্শন


 প্রাচীন সাহিত্য:

১. ঋকবেদ - এরমধ্যে ১০২৮ টি শ্লোক এবং দশটি মণ্ডলা বিদ্যমান

২.  সামবেদ- এটির মধ্যে ১৬০৩ টি শ্লোক

৩. যজুর্বেদ - এটির মধ্যে ১৫৪৯ টি শ্লোক

৪. অথর্ববেদ - এটির মধ্যে ৭১১ টি শ্লোক, অথর্ব বেদটিকে অনার্যদের বেদ বা অনার্যদের কাজ বলা হয় অর্থাৎ অনার্যদের জন্য রচিত ।

৫.  উপনিষদ- ১২০ টি উপনিষদ বিদ্যমান। প্রচলিত রয়েছে উপনিষদ কথাটির অর্থ হল "কারোর নিকট বসা "।


৬. মিলিন্দপহ্ন বইটি লিখেছেন নাগসেন ১০০বি সি থেকে ২০০এ ডি।

৭. পরিশিষ্ট পর্বন নামক বইটি লিখেছেন হেমচন্দ্র এটি ১২ শতাব্দীর সংস্কৃত মহাকাব্য।

 ৮.রাজতরঙ্গিনী বইটি লিখেছেন কবি কলহন।

৯. নীতিসার বইটি লিখেছেন কমন্দক।

১০. পৃথ্বীরাজ রাসো বইটি লিখেছেন চাঁদ বরদাই।

১১. গন্ধমাদন বইটি লিখেছেন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।

১২. দশকুমারচরিত বইটির লেখক দানদিন।

১৩. মৃচ্ছটিকম বইটি লিখেছেন শুদ্রক।

১৪. সপ্তসতী বইটির লেখক হলেন হল।

১৫. তোলকাপিয়াম বইটি লিখেছেন তোলকাপিয়ার।

১৬. মহাভাষ্য বইটি পতঞ্জলির লেখা।

১৭. পবনদূত বইটি ধ্যয়ী লিখেছেন।

১৮. কামসূত্র বইটি বৎসায়নের লেখা।

১৯. উত্তর রামছরিত ভবধূটি লিখেছে।

২০. রামচরিত মানস বইটি লিখেছেন তুলসীদাস।

 বিদেশি সাহিত্য

  •  ইন্ডিকাবইটি মেগাস্থিনিস লিখেছেন।
  • ফু-কুও-কি বইটি লিখেছেন ফা- হিয়েন।
  • সি-ঊ-কি বইটি লিখেছেন হি এন সাং।
  •  এপিটাম বইটি জাস্টিমের লেখা।
  •  তাহকক- ই- হিন্দ বইটি আলবেরুনীর লেখা।
  •  রেহেলা বইটি ইবান বতুতার লেখা।
  •  বিবলিও থেহা হিস্টোরিকা বইটি ডিওডোরাসের লেখা।

 বিশেষ দ্রষ্টব্য:

 কয়েন নিয়ে পড়াশোনা কে বলা হয়, নিউমিসম্যাটিক্স।

 শিলালিপির পঠন  পাঠনকে এপিগ্রাফি বলা হয়।


 শিলালিপি ও তার গুরুত্ব :

 ১. এলাহাবাদ প্রশস্তি : এলাহাবাদ প্রশস্তি লিখেছিলেন হরিসেন তিনি ছিলেন সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি এবং এলাহাবাদ প্রশস্তি ৩৩ টি লাইন বিশিষ্ট একটি শিলালিপি।

২. নানঘাট প্রসস্তি : নানঘাট প্রসস্তি প্রথম শতকর্নীর লেখা।

৩. নাসিক প্রশস্তি : এটি লিখেছিলেন গৌতমী পুত্র শতকর্নী।

৪. আইহোল শিলালিপি: এটি রবিকৃতি কর্তৃক রচিত।

৫. দেওপাড়া : উমাপতি ধর কর্তৃক রচিত।

৬. খালিমপুর এর শিলালিপি : এটি ধর্মপাল কর্তৃক রচিত হয়েছিল।

৭. ভাবর শিলালিপি : সম্রাট অশোক কর্তৃক লিখিত।

৮. মেহেরৌলি লৌহ পিলার : দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক লিখিত।

 স্থাপত্য:

১. দশ অবতার মন্দির এটি ঝাঁসিতে অবস্থিত, দশ অবতার মন্দির গুপ্তদের সময়কালে তৈরি।

২. রাজরাজেশ্বর মন্দিরটি অবস্থিত রয়েছে তাঞ্জোরে এবং এটি চোল রাজবংশ কর্তিক স্থাপিত।

৩. রক্ত মৃত্তিকা বিহার কর্ণসুবর্ণে অবস্থিত ইহা পাল বংশের সময়কালে তৈরি।

৪. সূর্য মন্দির এটি কোনারকে অবস্থিত যাহা গঙ্গা বংশের সময়কালের তৈরি।

৫. কুয়াত উল ইসলাম মস্কু নামক স্থাপত্যটি দিল্লিতে অবস্থিত এবং যেটি কুতুবুদ্দিন আইবক এর সময়কালে তৈরি হয়।

৬. পাঁচ মহল নামক প্রসিদ্ধ স্থাপত্যটি অবস্থিত ফতেপুরের সিক্রিতে যেটি আকবরের শাসনকালে নির্মিত হয়।

৭. জামিদ খা মস্কু, এই স্থাপত্যটি দিল্লিতে অবস্থিত যেটি আলাউদ্দিন খিলজীর শাসনকালে তৈরি হয়েছিল।

৮. বিথল নাথ মন্দির  নামক প্রসিদ্ধ মন্দির এর স্থাপত্যটি হাম্পিতে অবস্থিত যাহা তালুভ বংশ দ্বারা নির্মিত।


 সিন্ধু সভ্যতা :

 সিন্ধু সভ্যতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:

 ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে পুরাতন সভ্যতা হলো মেহেরগড় সভ্যতা। মেহেরগড় সভ্যতা ১৯৭৪ সালে জেএফ জারেজ যিনি একজন ফরাসি ইতিহাসবিদ ছিলেন। তিনি ভালোতিস্থানে বোলার নদীর উপত্যকায় (তীরে) মেহেরগড় সভ্যতার খোঁজ পান। দয়ারাম সাহানি এবং রাখালদাস ব্যানার্জি উভয়ের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে জন মার্শাল হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারোর খোদাই বা খনন কাজ শুরু করে।

 ১৯২১ সালে হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কার করেন দয়ারাম সাহানি। ( ১৯২০ তে খনন কাজ শুরু হয় )। এখানে বিশেষভাবে জেনে রাখার প্রয়োজন যে হরপ্পা সভ্যতার অনুমান করা হয়েছিল প্রথমে এবং তারপর খনন কাজ শুরু করা হয়। ১৯২০ সালে খনন কাজ শুরু করা হয় এবং হরপ্পা সভ্যতার সফলভাবে আবিষ্কার করার সময় টি হল ১৯২১ সাল।

 বর্তমানে ১৪০০ এর বেশি বসতি সারা ভারত জুড়ে পাওয়া গেছে যেগুলো আলাদা আলাদা সংস্কৃতি।

 সিন্ধু সভ্যতা প্রায় ১২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬০০ স্কয়ার কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত। এই সমস্ত বসতি গুলি প্রধানত নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বা নদীর তীরে গড়ে ওঠে। কিছু কিছু বসতি যেমন মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা, ধলোয়াভিরা, রাখিগড়ি, কলিবঙ্গান এই সমস্ত স্থান গুলির মত।

 এই সভ্যতায় প্রায় সব কয়টি থানে ই উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত  বড় চওড়া মেনরোড বা বড় সড়ক  এবং পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত দুর্গ দেখতে পাওয়া যায় এবং এই সভ্যতার রাজধানী ঠিক শহরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত যেটিকে সম্পূর্ণরূপে শহরের আকারে বানানো হয়েছিল। ঐ সভ্যতার মানুষ যথাযথ পরিকল্পনা করে তাদের শহরটিকে নির্মাণ করেন কারণ শহরটিতে সুন্দরভাবে বিভক্ত পরিসর, দৈর্ঘ্য ও বিস্তৃতি দেখতে পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি ভাগেই রাস্তার ধারে বড় মাটির পাত্র রাখা থাকত আবর্জনা ফেলার জন্য।

 ডক্টর গুহ এই মত প্রকাশ করেছেন যে, তখনকার বাজার ছিল মঙ্গোলয়েড, প্রোটোস্ট্রোলয়েড, ম্যাডিটেরিয়ান এবং আলপিন বা বিভিন্ন সমন্বয়ের মানুষে ভর্তি। বর্তমানে এটি প্রমাণিত যে মেহেরগড় সভ্যতার মানুষ ছিল সিন্ধু সভ্যতার নির্মাতা।

 মহেঞ্জোদারোতে স্থিত স্নানাগার ধর্মীয় স্নানের জন্য ব্যবহৃত হতো।

 হরপ্পার ইকোনমি ছিল প্রধানত কেনাবেচা বা ট্রেডভিত্তিক অর্থাৎ বাণিজ্যভিত্ত, গবাদি পশু পালন এবং কৃষিকাজ ভিত্তিক।

 হরপ্পা সভ্যতা মূলত ব্রোঞ্জের যুগের সভ্যতা।

 সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের সম্ভাব্য  কারণ গুলি হল নিম্নরূপ :

১. প্রত্যেক বছরের বিস্তর বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা এবং তার ফলে নদী গুলির আকস্মিক দিক পরিবর্তনের জন্য।

২. বিপুল পরিমাণে অরণ্য কেটে ফেলা এবং চাষাবাদ নষ্ট হওয়া জ্বালানির অভাব, সম্পদের অভাব, প্রাকৃতিক সম্পদের উৎসের অভাব।

৩. বৈদেশিক ট্রেডে ক্রমাগত কারেন্সির অবনতি।

৪. বহিরাগত শক্তির আক্রমণ।

 গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

 ১.সিন্ধু সভ্যতা চালকলিথিক যুগের/ ব্রোঞ্জ যুগের/ প্রটো হিস্টোরিক যুগের।

২. মেসোপটেমিয়ার মানুষেরা সিন্ধু সভ্যতার মানুষদের মেলুহা বলতো।

৩. সিন্ধুরা পুজো করত বটবৃক্ষ অর্থাৎ পিপুল গাছের, পশুদের মধ্যে ষাঁড়, একশৃঙ্গ ডানাযুক্ত ঘোড়া বা ইউনিকর্ন।

৪. তারা পুজো করত না অর্থাৎ পূজনীয় মনে করত না  যাদের তা হল ন্যাচারাল পাওয়ার বা প্রকৃতির বিভিন্ন প্রকারের শক্তি গুলিকে।

৫. তারা মৃত ব্যক্তিদের কবর দিত।

৬. সম্পূর্ণ হরপ্পা সভ্যতা একটি ত্রিকোণিক এলাকা হিসেবে প্রদর্শিত হয়।

৭. মহেঞ্জোদারো সবচাইতে বড় নির্মাণটি হল কবরস্থান। মহেঞ্জোদারো শব্দটির অর্থ হল মৃতের স্তুপ।

৮. সিন্ধু সভ্যতাই দেবীদের পুজো  বা মাতৃতান্ত্রিক পুজো দেখা যেত।

৯. পৃথিবীতে মানুষের প্রথম অস্তিত্ব পাওয়া গেছে পেলিওলিথিক সময় অর্থাৎ প্রস্তর যুগে।

১০. Pictography হলো হরপ্পা সভ্যতার লিপি।

১১. মিহিরগড় হলো ভারতের সবচেয়ে পুরাতন নিওলিথিক নিদর্শন।


Reactions

Post a Comment

0 Comments